October 24, 2024, 8:18 pm

সংবাদ শিরোনাম :
খুলনা জেলা কারাগারে হাজতি ও কয়েদির সাথে মারামারি ৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান বিগত ১ বছরে দুবার ঝড়ে কপাল পোড়েছে কয়রা বাসির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিনকে গাজীপুরে পদায়ন সাবেক কমিশনার হারুনের দাপটে বসত ভিটে ছড়া এক দম্পতি   খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত খুলনা পাইকগাছায় বিগত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ আহত ৫৬  কয়রায় এক নারী বাসা বাড়ি কাজ করতে করতে বর্তমানে চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী কয়রা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময় সভা  আন্তরজাতকি এয়ারট্রাফকি কন্‌ট্রালারূক্স ডে উদযাপন

সেবা পেতে চমেকের বারান্দায় তিন ঘণ্টা চরম অবহেলায় পড়ে ছিলেন রমা চৌধুরী

ডেস্ক নিউজ- রমা চৌধুরী এক বীরাঙ্গনা নারীর নাম এক মমতাময়ী মায়ের নাম, এক হার না মানা নারীর নাম। ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর (এমএ) নারী তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত একজন বীরাঙ্গনা। ১৯৭১ সালের ১৩ মে ভোরে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিজ বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হন। সম্ভ্রম হারানোর পর পাকিস্তানি দোসরদের হাত থেকে পালিয়ে পুকুরে নেমে আত্মরক্ষা করেছিলেন। হানাদাররা গানপাউডার লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় তাঁর ঘরবাড়িসহ যাবতীয় সহায়-সম্পদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি তিন পুত্রসন্তানের জননী। থাকতেন পৈতৃক ভিটা পোপাদিয়ায়। তার স্বামী ভারতে চলে যান। ১৩ মে সকালবেলা পাকিস্তানি হানাদাররা এসে চড়াও হয় তাঁর ঘরে। তাঁকে জোর করে নিয়ে যায় পাশের নির্জন ঘরে। সন্তানের মায়ায় আত্মহনন থেকে নিবৃত্ত থাকলেও মানসিক এক অসীম কষ্ট সেই থেকে বয়ে বেড়ান।  ঘরবাড়িহীন বাকি আটটি মাস তাঁকে তিনটি শিশুসন্তান আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে জলে-জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়াতে হয়েছে। রাতের বেলায় পোড়া ভিটায় এসে কোনোমতে পলিথিন বা খড়কুটো নিয়ে মাথায় আচ্ছাদন দিয়ে কাটিয়েছেন।

১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া বীর এখন একাধিক রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। সাত মাস ধরে হাসপাতাল আর বাসায় আসা-যাওয়ার মধ্যে দিন কাটছে তার। অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) গিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হন। চমেকের বারান্দায় তিন ঘণ্টা পড়ে ছিলেন চরম অবহেলায়। সেবা না পেয়ে ক্ষোভে ও অপমানে রাত ১টায় হাসপাতাল ছেড়ে নগরীর মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে। তার পাশে দাঁড়িয়েছেন মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান। কোনো অর্থ না নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে দুই দফা মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে রমা চৌধুরী বলেন, ‘আমি বাঁচতে চাই। একাত্তর সালে পরাজিত হইনি। স্বাধীন দেশে রোগ ও অর্থের কাছে পরাজিত হতে চাই না।’ তার দেখাশোনা করছেন ছেলে জহর লাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মা ডায়াবেটিস, গলব্লাডারে পাথর, অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার, হৃদরোগ, অ্যাজমাসহ অনেক রোগে আক্রান্ত। গত জুন মাস থেকেই গুরুতর অসুস্থ। চট্টগ্রামের ডায়াবেটিক হাসপাতালে ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার  পর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে বাসায় নিয়ে যাই; কিন্তু বাসায় যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে হঠাৎ পড়ে গিয়ে কোমরে ও পায়ে ব্যথা পান।

২৪ ডিসেম্বর মাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। একজন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। চিকিৎসা না দিয়ে তিন ঘণ্টা হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে রাখা হয় মাকে। পরে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করালেও নোংরা একটি বেডে মেঝেতে থাকতে দেয়। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ফোন করে মায়ের কেয়ার নিতে বলায় এক ডাক্তার বলেন, ব্যাটা (সিভিল সার্জন) ওখানে বসে ফোন করে। তার মাকে পাঠিয়েছে নাকি? এ সময় তিনি মাকে নিয়ে ঠাট্টাও করেন।’ তিনি বলেন, এখন যেখানে মা আছেন, এক লাখ টাকার মতো বিল এসেছে। কোথা থেকে এ টাকা পরিশোধ করব, বুঝতে পারছি না। মা অসুস্থ জানলেও কেউ মাকে দেখতে আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একবার মাকে ডেকে নিয়ে সম্মান দিয়েছিলেন। তিনি যদি আর্থিক সহযোগিতা করেন, মাকে বাঁচাতে পারব।’

বর্তমানে রমা চৌধুরী অর্থোপেডিক ডা. মসিরুল ইসলাম ও ডা. সরোজ সিংহের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। তিনি ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা মিলিয়ে নিজের ১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন বরেণ্য এই লেখক।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন