October 24, 2024, 2:29 pm

সংবাদ শিরোনাম :
খুলনা জেলা কারাগারে হাজতি ও কয়েদির সাথে মারামারি ৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান বিগত ১ বছরে দুবার ঝড়ে কপাল পোড়েছে কয়রা বাসির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিনকে গাজীপুরে পদায়ন সাবেক কমিশনার হারুনের দাপটে বসত ভিটে ছড়া এক দম্পতি   খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত খুলনা পাইকগাছায় বিগত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ আহত ৫৬  কয়রায় এক নারী বাসা বাড়ি কাজ করতে করতে বর্তমানে চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী কয়রা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময় সভা  আন্তরজাতকি এয়ারট্রাফকি কন্‌ট্রালারূক্স ডে উদযাপন

বৈশাখ এসেছে বিশ্বময় হয়ে , আলোকিত করেছে চিত্ত

Pohela Boishakh 2019

প্রতিনিধি – বৈশাখ মানেই আনন্দে উদ্বেলিত বাঙালি। বাংলা নববর্ষের এই বর্ণিল আয়োজন বাঙালির প্রাণে অনাবিল আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা আর সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে। বৈশাখ মানেই বাংলার লোকজ-সংস্কৃতির মূল্যবান অনুষঙ্গ- গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, আদিবাসী পল্লীতে বৈসাবি উৎসব, যাত্রাগান, পালাগান, পুতুলনাচ, অঞ্চলভিত্তিক লোকসংগীত, ঘোড়দৌড় প্রভৃতি।

ইতিহাসে বর্ণীত আছে যে, সম্রাট আকবর বর্ষপঞ্জি সংস্কারের আদেশ দেন। তিনি এই কাজের দায়িত্ব প্রদান করেন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহ-উল্লাহ সিরাজীকে। তিনি সৌর সন ও হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন সনের নিয়ম প্রবর্তন করেন। একে বলা হতো ‘সন-ই-ইলাহি’। কালের পরিক্রমায় এটি বাংলা সন বা ‘বঙ্গাব্দ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই সন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় ১৫৫৬ সালে আকবরের সিংহাসনের সময় থেকে। তবে বাংলাদেশে খ্রিষ্টীয় বছরের ১৪ এপ্রিল বাংলা সনের প্রথম দিন হিসেবে পালন করা হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওই দিনটি পালিত হয়ে আসছে ১৫ এপ্রিল। বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। হিন্দু সৌরপঞ্জিকা অনুসারে বাংলা ১২ মাস অনেককাল আগে থেকেই পালিত হতো। ওই সৌরপঞ্জিকা শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকার এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে। এ সময় পহেলা বৈশাখ ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হতো। আর এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ। মুঘল সম্রাটেরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারেই কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফসলের সঙ্গে মিলত না। এ কারণে কৃষককে অসময়ে খাজনা প্রদান করতে হতো। এ সমস্যা সমাধানের জন্যই এই দুই দেশের দুই দিনে পহেলা বৈশাখ পালনেও আছে মতান্তর ।

এখন বাঙালির বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। সম্প্রতি (২০১৬ খ্রি.) এই মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। সংস্থাটি বলছে, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।’ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয় সংস্থাটি। আর এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য এক বিশাল পাওয়া। বলতে গেলে, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এটি।এছাড়া বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় আবহমানকাল ধরেই।

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোনো কোনো শহরেও নববর্ষ উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। বৈশাখী মেলা মূলত সর্বজনীন লোকজ মেলা হিসেবে পরিচিত। মেলাতে স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাতসামগ্রী, হস্ত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী বিক্রি হয়। এছাড়া শিশু-কিশোরদের খেলনা, মহিলাদের সাজসজ্জার সামগ্রী, বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য- যেমন চিড়া, মুড়ি-মুড়কি, খই, বাতাসাসহ বিভিন্ন প্রকার মিষ্টির বৈচিত্র্যময় সমারোহ থাকে। মেলায় থাকে বিনোদনেরও ব্যবস্থা। বিনোদনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরা, গাজির গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত, বাউল-মারফতি-মুর্শিদি-ভাটিয়ালি ইত্যাদি। এর পাশাপাশি পুতুলনাচ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদিরও আয়োজন দেখা যায় বৈশাখী মেলায়। যে মেলা ছড়িয়ে দিচ্ছে বাঙ্গালীর অসাম্প্রদায়িক মানষিকতা ।

সাড়াদেশেই নানান অনুসঙ্গে এখন পালিত হয় বৈশাখী উজ্জাপন । জাতি ধর্ম ভেদে তা নানান নামে পালিত হলেও উদ্দেশ্য থাকে কিন্তু এক অসাম্প্রদায়িক বাংলা গড়া । এবার যা দেখা গেছে সাড়া দেশে । ১লা বৈশাখে ছিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব। এছাড়া রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশ এবং দেশের বাইরেও মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৈশাখকে বরণ করে নেওয়ার সংস্কৃতিও চালু হয়েছে বাংলা নববর্ষে ।বাংলা নববর্ষ বাঙালির আবহমানকালের সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক উৎসব। এই উৎসবের মধ্যেই রয়েছে বাঙালির আত্মপরিচয়, জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির বিকাশ। এই দিনটি বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও শেকড় সন্ধানের পরিচয়ও বহন করে।

উত্‌সব পাগল এই জাতি যথাযত ভাবেই পালন করেছে নিজেদের পরিচয় করিয়ে দেয়া এই দিনটিকে । উল্লেখযোগ্য বিষয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ডুডলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে বিশ্বময় করে এই উত্‌সবকে ।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন