October 23, 2024, 11:22 am
মনির হোসেন জীবন– ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ৮৮ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসামারিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান।
তিনি বলেন, আগামী ৭ অক্টোবর টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আগামী ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবহার করতে পারবেন সাধারণ যাত্রীরা। এরমধ্যে বিমানবন্দরে যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ পরিচালনায় সব প্রস্তুতি গ্রহন করা হবে।
আজ সোমবার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নিয়ে বেবিচক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), সম্প্রসারণ প্রকল্পটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, আমাদের লক্ষ্য ছিল ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ করে “সফট ওপেনিং” করা হবে। কিন্তু, আজ সোমবার পর্যন্ত ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং এর মাঝে বৃষ্টি ছিল। তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, সফট ওপেনিংয়ের আগে আমাদের টার্মিনালের কাজ শেষ হয়েছে। লিফট, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং ও বোর্ডিং ব্রিজ বসেছে। বাকি ১০ শতাংশ কাজ সফট ওপেনিংয়ের পর শুরু হবে।
তিনি বলেন, আপাতত আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নেব। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরে আমরা বিমানবন্দরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করতে পারব।
নির্ধারিত সময়ের আগে তৃতীয় টার্মিনালের মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, উদ্বোধনের আগেই ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারবো। এরই মধ্যে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন, বডিং ব্রিজ দৃশ্যমান হয়েছে। এই টার্মিনাল থেকে বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী সেবা পাবেন।
এম মফিদুর রহমান বলেন, টার্মিনাল চালু হতে এক বছর লাগলেও এর পার্কিংসহ অন্যান্য স্থাপনা ক্রমেই ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া আগামী পরশু দিন থেকে টার্মিনালের পার্কিংয়ে প্লেন রাখা হবে। এখানে এক সঙ্গে ৩৭টি প্লেন উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। ইতিপূর্বে ছিল আমাদের ২৯ টি উড়োজাহাজ।
বিশাল একটা এ্যারিয়া আমরা ব্যবহার করতে পারছি জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত ২০২০ সালে তৃতীয় টার্মিনালে নির্মাণের চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ৪৭১ দিনের মধ্যে সফট ওপেনিং করার কথা ছিল। আজকে চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ২৪১ দিন। আগামী ৭ অক্টোবর সফট ওপেনিং হবে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন সফট ওপেনিং এ উপস্থিত থাকবেন। নির্ধারিত সময়ের আগে সফট ওপেনিং হতে যাচ্ছে তৃতীয় টার্মিনালের। সফট ওপেনিংয়ের অনুষ্ঠান তৃতীয় টার্মিনালের ভেতরে অনুষ্ঠিত হবে। সারা দেশের মানুষ যেন উদ্বোধনের দিন গণমাধ্যমের এই টার্মিনাল দেখতে পারেন, সে জন্য আমরা ভেতরে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। এই প্রজেক্টা সময় মত শেষ করা হবে। এই জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত। সকল ধরনের সংযোগ এখানে বাড়ানো হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, ১২৪১তম দিনে সংবাদ সম্মেলন করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের আগে আমরা সফট ওপেনিং করতে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কারণে সব কিছু সম্ভব হয়েছে। আমরা সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তদারকি করা হয়েছে।
তৃতীয় টার্মিনালের কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গ তিনি তিনি জানান, আমাদের লক্ষ্য ছিল সফট ওপেনিংয়ের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করা। বর্তমানে এখন প্রায় ৮৮ শতাংশের ওপরে অর্থাৎ ৮৯ শতাংশের কাছাকাছি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, ওপেনিংয়ের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালটি ফুল ফাংশনাল করার। তবে, আমাদের কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক আগে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করছি। নির্ধারিত সময়ের আগে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালটি ফুল ফাংশনাল হবে বলে আশা করছি।
তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ বা যাতায়াতের সব মাধ্যম যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত কাওলা মেট্রোরেল স্টেশনের সঙ্গে টানেল নির্মাণ করা হবে। এখন টার্মিনাল অংশে টানেল তৈরি আছে। বিআরটি লাইনের সঙ্গেও যাতে সংযোগ দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নতুন টার্মিনাল ফুললি ফাংশনাল হলে সেবার মান বৃদ্ধি পাবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই তৃতীয় টার্মিনাল করা হয়েছে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের জন্য। এভিয়েশন হাব হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এই তৃতীয় টার্মিনাল করা হয়েছে। যাত্রী সেবা নিশ্চিত করার জন্য বিদেশি একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে, বিদেশি সংস্থা কাজ করলেও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকবে আমাদের হাতে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, এটা কোনো একক কাজ না। আমরা সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা করব, দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরের মতো।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র আরো জানান, ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। তবে, এ টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হবে মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিং। ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।