October 24, 2024, 8:27 am

সংবাদ শিরোনাম :
৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান বিগত ১ বছরে দুবার ঝড়ে কপাল পোড়েছে কয়রা বাসির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিনকে গাজীপুরে পদায়ন সাবেক কমিশনার হারুনের দাপটে বসত ভিটে ছড়া এক দম্পতি   খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত খুলনা পাইকগাছায় বিগত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ আহত ৫৬  কয়রায় এক নারী বাসা বাড়ি কাজ করতে করতে বর্তমানে চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী কয়রা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময় সভা  আন্তরজাতকি এয়ারট্রাফকি কন্‌ট্রালারূক্স ডে উদযাপন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামকে গ্রেফতার

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয়ের কথা বলে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

তামান্না আক্তারঃ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র‌্যাব বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গে নাম ও পরিচয় ভাঙ্গিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেয়া, গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি, বদলি বাণিজ্য, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক প্রকল্পের টেন্ডার পাইয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতরণা ও মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে। সাম্প্রতি সময়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম ও পরিচয় ভাঙ্গিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ঠিকাদারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুই জনকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। যারা বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে এরূপ প্রতারণার সাথে জড়িত রয়েছে র‌্যাব এ সকল প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে নজরদারী অব্যাহত রেখেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্কের কথা বলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তি, গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেয়াসহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতা আবু হানিফ তুষার @হানিফ মিয়া (৩৯), পিতা- মৃত মোস্তফা কামাল @ফুল মিয়া, কসবা, বাহ্মণবাড়িয়াকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, এ্যামুনেশন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত গাড়ী ও বিভিন্ন ভিডিও এবং এডিট করা ছবি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত বর্ণিত প্রতারণা সম্পর্কে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আবু হানিফ দীর্ঘদিন যাবৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্কের কথা বলে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা করে আসছিল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ দাবী করে আসছিল। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আবু হানিফ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি, সরকারি চাকুরীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে জানা যায়। সে প্রতারণা করার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতো। সে দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন বেনামী মোবাইল নম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে মোবাইলে সেভ করতো। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন এ্যাপস থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য সেজে সে নিজেই অথবা চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতো। চ্যাটিং এ তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়া, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়া সংক্রান্ত ও বিভিন্ন অংকের অর্থ দাবী সংক্রান্ত বার্তা নিজেরাই নিজ চক্রের সদস্যদের সাথে আদান-প্রদান করতো। সে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সাথে নিজের ছবি এডিট করে বসাতো এবং নিজেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিকটাত্মীয়ের সাথে সুসর্ম্পক রয়েছে বলে মিথ্যা দাবী করে তা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে প্রেরণ করতো। সে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ছবি তুলে তার টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে দেখাতো/প্রেরণ করতো।

গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, সে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যাদের মনোনয়ন প্রাপ্তির সম্ভাবনা দোদুল্যমান/ক্ষীণ, তাদেরকে টার্গেট করতো। পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিজেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্ক রয়েছে বলে দাবী করে মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য মোটা অংকের অর্থ দাবী করতো। ক্ষেত্র বিশেষে, সে দামী গাড়ী করে দেশের বিভিন্ন স্থানে দামী হোটেলে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করতো। সে বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার জন্য ২০০-৩০০ কোটি টাকা দাবী করতো। বিশ^াসযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য সে বিদেশি বিভিন্ন মোবাইল নম্বর তার মোবাইলে সেভ করতো এবং দেশের বাহিরে অবস্থানরত চক্রের অন্য সদস্যদেরকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য সাজিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সাথে মোবাইলে কথাও বলিয়ে দিতো। এছাড়াও, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বা পদোন্নতি প্রাপ্তির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার নিকট বিপুল অংকের অর্থ দাবী করতো। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদ পাইয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। সে প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ জনের অধিক ব্যক্তিকে চাকুরী পাইয়ে দিয়েছে বলে জানায়। সে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে অদ্যাবধি প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অধিক অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আবু হানিফ এইচএসসি পাশ হলেও তিনি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে বলে মিথ্যা পরিচয় দিত। সে ২০০৮ সালে মটরপার্টস এর ব্যবসার সাথে জড়িত হয়। পরিবহণ সেক্টরে দেশের বিভিন্ন রুটে তুষার এন্টারপ্রাইজ পরিবহন নামে তার বেশ কয়েকটি বাস ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেট কার রয়েছে। সে ঢাকার নাখাল পাড়া এবং ধানমন্ডি এলাকায় দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার-প্রচারনা চালাতো। ২০১৪ সাল পরবর্তী সময়ে একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করে। সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌশলে রাজনৈতিবিদ, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে নিজের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে সুসম্পর্ক তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অফিস বা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে এবং প্রতারণার কাজে এই ছবিগুলো ব্যবহার করতো। সে ২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুক একাউন্ট খুলে। বিভিন্ন সময়ে সে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে, অনুষ্ঠান, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং দেশের বাহিরে বিভিন্ন সময় ভ্রমণ করে ছবি তুলে তা ফেইসবুকে আপলোডের মাধ্যমে তার ফেইসবুক একাউন্ট এর পরিচিতি ও দেশে-বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করতো। এছাড়াও সে ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্পন্সর করে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসার চেষ্টা করতো। সে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান জমি ও সম্পত্তির মালিক হয়েছে বলে জানা যায়। সে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক মামলা রয়েছে এবং উক্ত মামলায় একাধিকবার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন