October 23, 2024, 10:30 pm

সংবাদ শিরোনাম :
দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিনকে গাজীপুরে পদায়ন সাবেক কমিশনার হারুনের দাপটে বসত ভিটে ছড়া এক দম্পতি   খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত খুলনা পাইকগাছায় বিগত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ আহত ৫৬  কয়রায় এক নারী বাসা বাড়ি কাজ করতে করতে বর্তমানে চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী কয়রা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময় সভা  আন্তরজাতকি এয়ারট্রাফকি কন্‌ট্রালারূক্স ডে উদযাপন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামকে গ্রেফতার ১৯তম জাতীয় ফার্নিচার মেলা শুরু রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় কেশবপুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৮৯ টি মন্ডপে  দুর্গা পূজা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হলো 

মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় এক যুবক হত্যার ঘটনায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কামরুলসহ তিনজনকে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা হতে গ্রেফতার

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়াও র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যা ঘটনার দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করে র‌্যাব সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

গত ১২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত হতে বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদ বাজারের মোঃ মনর হোসেন @ মনা (৩১) নামক এক যুবক নিখোজ হয়। অনেক খোজাখুজি করেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে গত ১৪ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ আনুমানিক ১৩৩০ ঘটিকায় ডিএমপির খিলগাঁও থানাধীন গৌরনগর এলাকার জনৈক মোক্তার হোসেনের বাড়ির উত্তর পাশে নড়াই নদীর কিনারায় একটি অজ্ঞাত লাশ ভেসে আছে মর্মে লোক মারফত রাজাখালী নৌ পুলিশ জানতে পারে। পরবর্তীতে রাজাখালী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এবং খিলগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় লাশটির পেট এবং গলা কাটা অবস্থায় নদীর কিনারায় ভেসে আছে। পুলিশ কর্তৃক উক্ত অজ্ঞাত লাশটি সুরতহাল প্রস্তুত শেষে উদ্ধার করে মৃত পুরুষ ব্যক্তির মারা যাওয়ার কারণ নির্ণয়ের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। উক্ত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ডিএমপির খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে যার নম্বর ২২/২৭৯ তারিখ ১৫/১১/২০২৩। নদী থেকে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ১৬/১১/২০২৩ তারিখে মনার পরিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে লাশটি মোঃ মনর হোসেন @ মনার বলে সনাক্ত করে এবং নিয়ে এসে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করে। উক্ত হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। এ রকম নিষ্ঠুর, নৃশংস হত্যাকান্ডে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। র‌্যাব পরবর্তীতে এই ক্লুলেস হত্যাকান্ডের ঘটনার সহিত জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ ২৩ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ ভোর রাতে আনুমানিক ০৪০০ ঘটিকার সময় র‌্যাব-১, এর আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে যে, ক্লুলেস হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী ডিএমপি, বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডা এলাকায় আত্মগোপনে আছে। প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১, আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ক্লুলেস হত্যা মামলার আসামী ১) মোঃ কামরুল ইসলাম (৩৬), পিতা-ওকুালদ্দীন, থানা-বাড্ডা, ডিএমপি এবং কামরুলের দেওয়া তথ্য মতে তার অন্যতম সহযোগী ২) আকরাম হোসেন @ গুলফাম (২৭), পিতা- মোঃ হারুন মিয়া, থানা-বাড্ডা, ডিএমপি, ঢাকা ও ৩) মোঃ আবুল বাশার (৪৪), পিতা- মোঃ আবুল হোসেন, থানা- বাড্ডা, ডিএমপি, ঢাকাদের’কে বড় বেরাইদ বাজারস্থ ৩০ ফিট রাস্তার উপর হতে গ্রেফতার করা হয়। এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ০৩টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২১০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী মোঃ কামরুল ইসলামের (৩৬) ও তার দুই সহযোগী এই ঘটনার সহিত জড়িত মর্মে স্বীকার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ধৃত আসামীগণ এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী যাদের নামে থানায় একাধিক মাদক মামলা চলমান রয়েছে। নিহত যুবক মনর হোসেন @ মনা বিভিন্ন সময় অনৈতিক ও আইন শৃংখলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে এবং মাদক ব্যবসায় বাধা প্রদান করলে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী কামরুল, গুলফাম, বাশার এবং আরো কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী মনার উপর ক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে তারা তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল, গুলফাম এবং বাশার হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে এবং নৃশংস হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয়। ঘটনার রাতে, মাছ ধরার কথা বলে কামরুল ভিকটিমকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে। কামরুল সম্পর্কে ভিকটিমের চাচাতো দুলাভাই হওয়ায় সে কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই গভীর রাতে তার সাথে বের হয়। বড় বেরাইদ বাজারস্থ ৩০ ফিট রাস্তার পাশে নদীর ঢালে পূর্ব থেকেই ধৃত আসামী বাশার, গুলফাম ও অন্য আরেকজন ওঁত পেতে ছিল। তারা চারজন মিলে ভিকটিমকে নদীর মধ্যে নিয়ে যায় এবং গুলফাম পেটে এবং গলায় ছুরি চালায়। মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশটি নদীতে ভাসিয়ে দেয় এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি নদীতে ছুড়ে ফেলে দেয়। এই হত্যাকান্ডে জড়িত অন্য আসামিকে গ্রেফতারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আসামী মোঃ কামরুল ইসলাম এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে বাড্ডা থানার মামলা নং ৩৩ তারিখঃ ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ সহ একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। ভিকটিম মনা সম্পর্কে তার চাচাতো শ্যালক। ভিকটিম ইতোপূর্বে দুই তিনবার আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ তাকে ধরিয়ে দেওয়ায় তার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এরই একপর্যায়ে তাকে হত্যা করে।

ধৃত আসামী আকরাম হোসেন @ গুলফাম পেশায় একজন কসাই। এই পেশার আড়ালে সে মূলত চুরি এবং মাদক ব্যবসায় জড়িত। তার নামে বাড্ডা থানার মামলা নং ২১/৬৮ তারিখঃ ২২ মার্চ ২০১৮ এবং বাড্ডা থানার মামলা নং ১৯ তারিখঃ ১৫ অক্টোবর ২০২২ সহ আরো মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা যায়।

ধৃত আসামী মোঃ আবুল বাশার পেশায় একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে বাড্ডা থানার মামলা নং ৫৪ তারিখঃ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ এবং বাড্ডা থানার মামলা নং ৪৯ তারিখঃ ২৮ আগস্ট ২০২১ সহ আরো মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন