October 25, 2024, 10:32 am
দুর্নীতি রিপোর্ট ডেক্সঃ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়াও র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যা ঘটনার দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করে র্যাব সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী মাসুদ রানা(৪৬) আনুমানিক ০৫(পাঁচ) বছর পূর্বে ভিকটিম হাফিজা আক্তার(২৮)কে পারিবারিকভাবে বিবাহ করে। আসামী মাসুদ রানার পূর্বে আরও একজন স্ত্রী ছিল। যা গোপন করে ভিকটিম হাফিজা আক্তারকে বিবাহ করে। উক্ত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাহের পর থেকে প্রতিনিয়ত পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। ঘটনার দিন ২৭/০৬/২০২৩ তারিখ তাদের মধ্যে উক্ত বিষয়ে পুনরায় ঝগড়া হয় এবং ২৮/০৬/২০২৩ তারিখ আসামী মাসুদ রানা ভিকটিমের ছোট ভাই সাব্বিরকে ফোন করে জানায় যে তার বোন অসুস্থ দ্রুত আসামীর ভাড়া বাসায় যেতে বলে। ভিকটিমের ছোট ভাই সাব্বির তার ভগ্œিপতির বাসায় গিয়ে তার বোনকে ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। ভিকটিমের পিতা মোঃ হাসেম সিকদার(৫২) ঘটনাস্থলে আসেন এবং উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে কালিয়াকৈর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নং-৫২/২৩, তারিখঃ ২৮/০৬/২০২৩খ্রিঃ রুজু হয়। কালিয়াকৈর থানা পুলিশ ভিকটিমের লাশ ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে মেডিকেল রিপোর্ট প্রাপ্ত হলে দেখা যায় এটা শারীরিকভাবে আঘাত করতঃ শ্বাসরুদ্ধ জনিত হত্যা। কালিয়াকৈর থানা পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে ভিকটিমের পিতা মোঃ হাসেম সিকদার বাদী হয়ে আসামী মাসুদ রানা(৪৬) সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে অভিযুক্ত করে কালিয়াকৈর থানায় এজাহার দায়ের করেন। যা কালিয়াকৈর থানার মামলা নং-২৩, তারিখঃ ২৫/০৭/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলা রুজু হওয়ার পর হতে আসামী মাসুদ রানা গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে পলাতক থাকেন। এই ঘটনাটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ব্যপক প্রচারিত হয় এবং এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এই হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১, সিপিএসসি এর একটি আভিযানিক দল ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায়ঃ ২৬-০৮-২৩ইং ২০.৩০ ঘটিকার সময় র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানী এর আভিযানিকদল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং ইন্ট উইং র্যাব সদর দপ্তর এর সহযোগিতায় জানতে পারে যে, সূত্রোক্ত মামলার প্রধান আসামী মাসুদ রানা(৪৬) ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন কোন্ডলবাগ এলাকায় একটি বাসায় আত্নগোপনে আছে। উক্ত সংবাদের ভিতিত্তে র্যাব-১, স্পেশালাইজড কোম্পানীর আভিযানিক দল ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন কোন্ডলবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মাসুদ রানা(৪৬) , পিতা-মৃত অহেজ উদ্দিন, থানা-মেলান্দহ, জেলা-জামালপুর‘কে অদ্য ২৭ আগষ্ট ২০২৩খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০০.৩০ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন কোন্ডলবাগ সাকিনস্থ ভূঁইয়া বাড়ী গ্রামস্থ শাহাজউদ্দিন ভূইয়া(৬২), পিতা-মৃত দিল মোহাম্মদ ভূঁইয়া এর ৫ম তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর ২৭ নং রুম হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী মাসুদ রানা(৪৬) তার ২য় স্ত্রী হাফিজা আক্তার(২৮)’কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে স্বীকার করে এবং এই হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জনৈকা বুলবুলি(৩৬) নামের তার একজন স্ত্রী আছে, যিনি আসামীর নিজ বাড়ী জামালপুর বসবাস করেন। উক্ত সংসারে তার ০২(দুই) ছেলে ও ০১(এক) মেয়ে রয়েছে। সে প্রথম স্ত্রী বুলবুলি(৩৬) এর বিবাহের কথা গোপন করে ০৫(পাঁচ) বছর পূর্বে ভিকটিম হাফিজা আক্তার(২৮)কে ২য় বিবাহ করে, মৌচাক আসামীর ভাড়া বাসায় বসবাস করে। এই বিষয় নিয়ে ভিকটিমের সাথে তার প্রায় ঝগড়া হত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ জুন ২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকা হতে ২৮ জুন ২০২৩ তারিখ দুপুর অনুমান ১২.১৫ ঘটিকার মধ্যবর্তী সময়ে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন কামরাঙ্গাচালা সাকিনস্থ জনৈক সেলিম এর বাড়ী আসামীর ভাড়াকৃত বসত ঘরে ভিকটিম হাফিজা আক্তার(২৮)কে আসামী মাসুদ রানা(৪৬), পিতা-মৃত অহেজ উদ্দিন, মাতা-জুলেখা বেগম, গ্রাম-টুপকার চর, থানা-মেলান্দহ, জেলা-জামালপুর, এ/পি গ্রাম-কামরাঙ্গাচালা(সেলিমের বাড়ীর ভাড়াটিয়া), থানা-কালিয়াকৈর, জেলা-গাজীপুর ভিকটিমকে শারীরিকভাবে গুরুতর আঘাত করতঃ শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর হত্যাকান্ডকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের লাশ গ্রেফতারকৃত আসামীসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন মিলে লাশ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখে এবং ঘরের দরজা তালা বন্ধ করে সকলে আত্নগোপনে চলে যায়। তাছাড়া গ্রেফতারকৃত আসামী ঘটনার পর থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে মর্মে জানা যায়।
উল্লেখ্য যে সিডিএমএস পর্যালোচনায় ধৃত আসামী মাসুদ রানার বিরুদ্ধে ১। ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার মামলা নং-০৭, তারিখঃ ০৫/০৪/২০১১, ধারা-৪২০/৪০৬/৫০৬ পেনাল কোড, ২। জিএমপি, গাজীপুর সদর থানার মামলা নং-৩১, তারিখঃ ২৬/১১/২০১৮খ্রিঃ ধারা-৩৪১/৩০৭/৩২৩/৩৬৫/৩৮৫/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড, ৩। গাজীপুর জয়দেবপুর থানার মামলা নং-৯৬, তারিখঃ ২১/১২/২০১৭খ্রিঃ, ধারা-আইন শৃ্খংলা বিঘœকারী অপরাধ(দ্রুত বিচার)আইন ২০০২ এর ৪(১)/৫ মামলা সমুহ পাওয়া যায়। যা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে। গ্রেফতারকৃত আসামী বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্তি পায় মর্মে জানা যায়।গ্রেফতারকৃত আসামী ক কালিয়াকৈর থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।