October 27, 2024, 6:24 pm

সংবাদ শিরোনাম :
কেশবপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে  দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা ব্যবসয়ী এম শরীফ উদ্দিনের নামে মিথ্যা মামল প্রত্যাহার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন কালীগঞ্জে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও বাতাসে উঠতি আমন ধানের ক্ষতি  দক্ষিণখানে নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান খিলক্ষেত কুরাতুলি ট্রাকের বেপরোয়া কান্ডে পুলিশ নিহত  শুধু ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে আমরা সন্তুষ্ট নয়;সকল অঙ্গ-সঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ডেঙ্গু প্রতিরোধে দক্ষিণ খান বিএনপি’র ভিন্ন রকম ক্যাম্পেন  শেখ হাসিনাকে ৫৭ বার ফাঁসি দিলেও ক্ষতি পূরণ হবে না: সেলিম উদ্দিন। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় আ’লীগ নেতাসহ ৯ জনের সদস্যপদ বাতিল পাইকগাছায় ঘুর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে অসহায় দিনমজুর সহিলের মাথা গোজার ঠাইটুকু হারিয়ে ফেলেছে

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফাল্গুনী শপ.কম এর সিইও মোঃ পাভেল হোসেন’কে সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ঃ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সাম্প্রতিককালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগনকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর পেশাদার প্রতারক চক্র। অতি সম্প্রতি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), ই-কমার্স, সমবায় সমিতি, এনজিও, অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করার বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছে র‌্যাব। এই সকল প্রতারকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশকিছু সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব-৪। সম্প্রতি কতিপয় ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখ ১৬.৫০ ঘটিকা হতে ২৫ নভেম্বর ২০২১ তারিখ ১২.২০ ঘটিকা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল মহানগরীর খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনলাইন শপ “ফাল্গুনী শপ.কম” এর সিইও মোঃ পাভেল হোসেন (৩০) সহ মোট ০৪ জনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

অভিযান কালে “ফাল্গুনী শপ.কম” অফিস হতে প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী যেমনঃ ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ০১ টি ম্যাগজিন, ০২ রাউন্ড গুলি, ২৪ ক্যান বিয়ার, ০৪ বোতল দেশি মদ, ০১ টি প্রাইভেট কার, কম্পিউটার, প্রিন্টার, বিপুল পরিমান এন-৯৫ মাস্ক, ১০০ টি ইনভয়েস, ৩০ চেক বহি, ৮০ টি সীল ও বিপুল পরিমান বিজ্ঞাপনের স্ক্রীনশট উদ্ধার করা হয়। অভিযান কালে তার ওয়ার হাউজ হতে ৪২৩ কেজি চাঁ পাতা, ৭১৫ কেজি চাউল, ৪১২ কেজি মসুর ডাল, ২৬০ কেজি ফুলক্রিম মিল্ক, ০৮ টি বাই-সাইকেল, ৪৫০ লিটার সয়াবিন তৈল, ২১৪ লিটার সরিষার তৈল, ৫০ কেজি লবন, ১১০ কেজি হুইল পাউডার, গøাস ক্লিনার, হারপিক অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।১। মোঃ পাভেল হোসেন (৩০), জেলা-গোপালগঞ্জ।২। মোঃ সাইদুল ইসলাম (৪০), জেলা-নেত্রকোনা।৩। আব্দুল্লাহ আল হাসান (২৫), জেলা-টাঙ্গাইল।৪। মোছাঃ ফারজানা আক্তার মিম (২১), জেলা-পটুয়াখালী।

প্রতারক পাভেলের উত্থানঃ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফাল্গুনী শপ.কম কারসাজির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মোঃ পাভেল হোসেন যিনি প্রতিষ্ঠানটির সিইও এবং গ্রেফতারকৃত মোঃ সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল হাসান, এবং মোছাঃ ফারজানা আক্তার মিম তার অন্যতম সহযোগী। গ্রেফতারকৃত মোঃ পাভেল ১৯৯১ সালে গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায় জন্মগ্রহণ করে। তারা ০৮ ভাই-বোন তার মধ্যে সে চতুর্থ। তার বাবা গোপালগঞ্জ জেলার একটি সরকারী অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছে। সে ২০০৭ সালে গোপালগঞ্জের স্থানীয় একটি স্কুল হতে এসএসসি, ২০০৯ সালে ঢাকার একটি কলেজ হতে এইচএসসি এবং ২০১৪ সালে একটি প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় হতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে বলে জানা যায়। ২০০৯ সালে এইচএসসি অধ্যয়নরত অবস্থায় সে একটি অস্ত্রসহ র‌্যাবের কাছে আটক হয় এবং তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি অস্ত্র মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর Learning and Earning Project এ রাজবাড়ীতে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি শুরু করে। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঠিকাদার হিসেবে কাজ করার সময় তার পরিচিত একজন তাকে অনলাইন ব্যবসা করার পরিকল্পনা দেয়। ২০১৯ সালের শুরুতে পাভেল, জনৈক দিদারুল আলম, কানিজ ফাতেমা ও রহমতুল্লাহ শওকত মিলে ফাল্গুনী শপ.কম নামে একটি অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম তৈরি করে। শুরুতে তারা উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়াকৃত স্পেসে আউটলেট খুলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাবসার শুরুতেই পাভেলের অন্য অংশীদারগণ তার এই গ্রহক ঠকানোর বিষয়টি বুঝতে পারে এবং তারা তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে এবং এফিডেবিট করে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে যৌথ ব্যবসা থেকে সড়ে যায়। তারা এ বিষয়টি জয়েন্ট স্টক অথোরিটিকেও অবহিত করে। তথাপি পাভেল তাদের নামে জাল সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রতারিত করত এমনকি তাদের নাম ব্যবহার করে যৌথনামে চেক পর্যন্ত ইস্যু করত। ২০২১ সালের মে মাসে প্রতারণার অভিযোগে কয়েকজন গ্রাহক পাভেলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের করলে পাভেল সিআইডি কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ২১ দিন জেলে থেকে জামিনে আসে এবং সে পূর্বের চেয়েও বেপরোয়া হয়ে উঠে। কিছু সংখ্যক গ্রাহক ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করলে অধিদপ্তর কর্তৃক একাধিকবার ফাল্গুনী শপ.কম এর আউটলেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের জুলাই মাসে পাভেল খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকায় “অরিমপো.কম” ও “টেক ফেমিলি.কম” নামে নতুন অফিস স্থাপন করে এর আড়ালেই ফাল্গুনী শপ.কম এর কার্যক্রম পরিচালনা করে। উল্লেখ্য যে, “অরিমপো.কম” ও “টেক ফেমিলি.কম” এ সে নিজে এমডি এবং তার স্ত্রী রিতা আক্তার চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ক। ক্রেতা সংগ্রহঃ এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা করোনা মহামারিতে লকডাউন চলাকালীন সময়ে অনলাইনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী স্বল্প মূল্যে বিক্রির চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে। তাদের এই বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতাসাধারণ তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং বিপুল পরিমান অর্ডার দিতে থাকে। পরবর্তীতে প্রতারক প্রতিষ্ঠানটি কিছু কিছু ক্রেতাকে আংশিক, কিছু কিছু ক্রেতাকে নি¤œমানের পণ্য আবার কিছু কিছু ক্রেতাদের কোন পণ্য সরবরাহ না করে সমূদয় টাকা আত্মসাৎ করে।

খ। ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহঃ যেসকল ক্রেতা তার এই অনলাইন শপ ফাল্গুনী.কম পণ্যের অর্ডার করতো তাদেরকে সে পণ্যের সমূদয় মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতে বলত। তখন সাধারণ লোকজন তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে চাহিত পন্যের সমূদয় মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতো। সে পরবর্তীতে মার্চেন্ট একাউন্ট ও অনলাইন গেটওয়ে থেকে টাকা অন্যত্র স্থানান্তর বা জমি/প্লট কিনে টাকা লেয়ারিং করত।

গ। প্রতারণার কৌশলঃ প্রতারণার কৌশল হিসেবে সে শুরু থেকেই তার অনলাইন শপ falgunishop.bd” এবং ফেইসবুক পেইজ falgunibd এর মাধ্যমে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে মূল্য নির্ধারন করে তা অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার করে সাধারণ লোকজনদের আকৃষ্ট করতো। পরবর্তীতে সাধারণ লোকজন তার দেওয়া বিজ্ঞাপন দেখে স্বল্প মূলে পন্য পাওয়ার আশায় তার সাথে যোগাযোগ করতো। ক্রেতাগণ যোগাযোগ করলে সে তাদের বলে যে, পণ্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে। তখন সাধারণ লোকজন তার কথা সরল মনে বিশ্বাস করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে চাহিত পন্যের মূল্য চক্রের মূলহোতা পাভেলকে অগ্রিম পরিশোধ করতো। টাকা পেয়ে সে ক্রেতাদের চাহিত পন্য না দিয়ে নি¤œমানের পন্য পাঠিয়ে দিত আবার কিছু কিছু সময় কোন পন্যই পাঠাতো না। পরবর্তীতে সে আর ঐ ক্রেতাদের সাথে আর কোন প্রকার যোগাযোগ করতো না। এতে করে চক্রের মূলহোতা পাভেল তার সহযোগী আসামীদের সহায়তায় দীর্ঘদিন যাবত সাধারণ লোকজনের নিকট হতে প্রতারনা মূলকভাবে প্রচুর পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে। প্রতারণার আর এক কৌশল হিসেবে সে কোন প্রকার অবগতি ছাড়া তার অফিসের ঠিকানা পরিবর্তন করে যাতে করে প্রতারিত গ্রহক সকল তার অফিসে এসে কোন প্রকার অভিযোগ না করতে পারে। গ্রেফতারকৃত আসামী পাভেল নিজেও একজন মাদকসেবী। সে অনলাইন ব্যবসারা আড়ালে মাদক ব্যবসাও পরিচালিত করত।

ফাল্গুনী.কম শপের ব্যবসায়িক অবকাঠামো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শুরুতে তারা উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়াকৃত স্পেসে আউটলেট খুলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে এবং বর্তমানে বনশ্রী এলাকায় ভাড়াকৃত স্পেসে তাদের এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে একইস্থানে তার ২টি ওয়ার হাউজ চালু করা হয়। বর্তমানে তার কোম্পানীতে ১০-১২ জন কর্মচারী রয়েছে যাদেরকে সে মাসিক ২.৫/৩ লক্ষ টাকা বেতন পরিশোধ করে। অনলাইন শপ ফাল্গুনী শপ.কম এর নামে কোন ব্যাংক হিসাব নেই। পাভেলের ০৪টি বিভিন্ন ব্যাংকে নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকা রয়েছে। অদ্যবধি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সাল হতে তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাব হতে প্রায় ০৪ কোটির অধিক টাকা লেনদেন হয়েছে। তার নামে ফাল্গুনী শপ.কম, ফাল্গুনী শপ এবং ফাল্গুনী শপ বিডিসহ সর্বমোট ২৮ টি নামসর্বস্ব কোম্পানীর সন্ধান পাওয়া যায়। “ফাল্গুনী শপ.কম” এ কোম্পানী ছাড়া বাকি ২৭ টি কোম্পানীর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পাভেল অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির, সে অনলাইন শপের নামে কোন ব্যাংক হিসাব না খুলে তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা গ্রহন করে অন্যত্র স্থানান্তর বা জমি/প্লট কিনে টাকা লেয়ারিং করত। উক্ত অনলাইন শপের সিইও পাভেল নিজে এবং তার স্ত্রী পলাতক আসামী রিতা আক্তার (২৬) তার অন্যতম ব্যবসায়িক পার্টনার। বর্তমানে তার স্ত্রী রিতা আক্তার “টেক ফ্যামিলি.কম” নাম সহ আরও ০৭-০৮টি কোম্পানী খোলার পায়তারা করতেছে বলে জানা যায়।

ক্রেতাসাধারণের অভিযোগঃ গ্রেফতারকৃত পাভেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও প্রতারণা মামলা রয়েছে। তার কাছে কোন ভ‚ক্তভোগী পণ্য অথবা তাদের পরিশোধকৃত টাকা চাইতে তার অফিসে গেলে সে তাদের পণ্য ও টাকা প্রদান করতো না। সে তাদেরকে অস্ত্র দেখিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতিসহ তার নিজস্ব টর্চার সেলে লাঠি পেটা, বৈদ্যুতিক শকসহ অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিত।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ উক্ত অভিযানটি পরিচালনা করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও প্রতারণার মামলা রুজুর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এইরুপ অসাধু সংঘবব্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন