December 22, 2024, 10:31 pm
সোহেল রানা রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো প্রধানঃ রাজশাহীর কেশরহাট পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন এক কাউন্সিলর। পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজশাহীর সিনির স্পেশাল জজ আদালত ও জেলা দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেছেন ওই পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল। গত ৬ মর্চা তিনি আইনজীবির মাধ্যমে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটির কপিটি গতকাল রাতে সিল্কসিটিনেউজের হাতে এসে পৌঁছেছে।
মামলার আরজিতে যা বলা হয়েছে, বাদী রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলাধীন কেশরহাট পৌরসভার একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর হইতেছেন। তিনি অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সহিত তাহার দায়িত্ব পালনে স্বচেষ্ট আছেন। ইহা ছাড়াও তিনি সমাজের বিভিন্ন জনহীতকর ও সমাজ সেবা মূলক কর্মকান্ডের সহিত জড়িত রহিয়াছেন।
২। আসামী মোঃ শহিদুজ্জামান শহিদ উল্লেখিত পৌরসভার বর্তমান মেয়র হইতেছেন। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালনের সময় বিধি বিধান, নিয়ম নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া একক সিদ্ধান্তে স্থানীয় কিছু কুচক্রি ব্যক্তির সহায়তা ও পরামর্শক্রমে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এবং তাহার কুচক্রি সহযোগিদের লাভবান করার উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় উক্ত পৌরসভার বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করিয়াছেন যাহার বিবরণ নিম্নে প্রদান করা হইল।
ক) ADP কর্তৃক পৌরসভার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ২০১৬-২০১৭ হইতে গত অর্থ বৎসর পর্যন্ত প্রতি অর্থ বৎসরে প্রতি কিস্তি ১৭,৫০,০০০/- (সতের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা) করে মোট ৪(চার) কিস্তির ৭০,০০,০০০/-(সত্তর লক্ষ টাকা)×৬ =৪,২০,০০,০০০/-(চার কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা) এবং বর্তমান অর্থ বৎসরে দুই কিস্তিতে মোট ২৬,০০,০০০/-(ছাব্বিশ লক্ষ টাকা) বরাদ্দ টেন্ডারের মাধ্যমে ব্যয় হওয়ার কথা থাকলেও আসামী মেয়র টেন্ডার আহব্বান না করে কুট কৌশল এর আশ্রয় গ্রহণ করে ভূয়া কোটেশন দেখিয়ে পৌরসভার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কোন কাজ না করেই ইচ্ছে মত বিল ভাউচার বানিয়ে তা সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করেন।
খ ) রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক ঘেসে রাজশাহী অঞ্চলের বিখ্যাত আর্থিক লেনদেন সমৃদ্ধ বাজার কেশরহাট হতে ইজারা মূল্য, স্থানী সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস হতে প্রাপ্ত অর্থ ও হোল্ডিং ট্যাক্স হতে ১(এক কোটি)টাকার বেশী অর্থ আদায় হলেও সে অর্থ কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে নামে/বেনামে বিভিন্ন ভূয়া বিল ভাউচার দাখিল করে অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
গ) মোহনপুরের কেশরহাটপৌরসভার উন্নয়নে সরকার কর্তৃক বিশেষ বরাদ্দ বাবদ ৫০(পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা পৌরসভার বঞ্চিত, অবহেলিত আপামর জন সাধারণের উন্নয়নে ব্যবহার করার কথা থাকলেও সে খাতে ব্যবহার না করে নিজ অফিসের কথিত সাজ-সজ্জায় বিল ভাউচার ছাড়াই খরচ দেখিয়ে ৫০(পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ঘ) বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় এর অধীন জলবায়ু ট্রাষ্ট কর্তৃক বরাদ্দ প্রায় ৩(তিন) কোটি টাকা রেজুলেশন ও নিয়ম, নীতি ছাড়া নামকা অন্তে সামান্য কিছু কাজ কর্ম করে বাকী টাকা ভূয়া প্রকল্পে খরচ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
ঙ) কেশরহাট পৌরসভায় BMDF কর্তৃক নির্মিত দ্বিতল ভবনের প্রায় শতাধিক ঘর কোন রেজুলেশন ও নিয়ম, নীতি ছাড়া বিভিন্ন ব্যাক্তিকে বরাদ্দ প্রদার করে বরাদ্দ হতে প্রাপ্ত অর্থ যাহার পরিমাণ প্রায় ৩(তিন) কোটি টাকা পৌরসভার কোষাগারে জমা প্রদান না করে আত্মসাৎ করেন ৷
চ) কেশরহাট পৌরসভায় কোন প্রয়োজনীয়তা ছাড়া এগার জন পরিছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেখিয়ে তাদের বেতন ভাতা বাবদ অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন কাজ না আত্মসাৎ করেন।ছ) কেশরহাট পৌরসভার জন্য নগর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ ৮(আট) কোটি টাকার কোন বিধায় প্রার্থনা এই যে, অত্র মামলা আমলে গ্রহণ করিয়া সুবিচার করিতে মর্জি হয়, প্রকাশ থাকে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন এর সমন্বিত জেলা কার্য্যালয় রাজশাহীর নিকট লিখিত অভিযোগ করিলেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র শহিদুজ্জামানের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি কেশরহাট পৌরসভার ৫ জন কাউন্সিলর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের বিরুদ্ধে সাত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।