December 23, 2024, 7:50 am
আবু সাইদঃ খুলনা পাইকগাছায় জেলা পরিষদের জায়গায় নির্মিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি উচ্ছেদ করা হয়নি গত এক বছরেও। গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর আদালতের নিদের্শে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন মধুমিতা পার্ক অভ্যন্তরের অন্তত ৩০টি পাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে প্রশাসন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপজেলা কার্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি রয়ে যায় অক্ষত।
এর আগে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন মধুমিতা পার্ক দখলের বিষয়টি উল্লেখ করে পার্ক সংরক্ষণ কমিটি হাইকোর্টে কোর্ট অব কন্টেম পিটিশন দাখিল করেন। যার নং ১০২/২২। যার প্রেক্ষিতে কয়েক দফা শুনানীর পর গত ১৩ মার্চ ২০২৩’ হাইকোর্ট মামলার বিবাদীদেরকে পরবর্তী ২০ দিনের মধ্যে মধুমিতা পার্কের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদপূর্বক মধুমিতা পার্কটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, জনৈক মাদার মন্ডল পানীয় জলের অভাব দূরীকরণে পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রের বাতিখালি মৌজার সাবেক ৯১ খতিয়ানের ১৭১, ১৭২ দাগের ১.০৭ একর জমি তদানিন্তন ভারত সরকারের নামে দান করেন। এরপর সেখানে পুকুর খননের মাধ্যমে এলাকাবাসীর মিষ্টি পানির অভাব দূর হতে থাকে। বিস্তির্ণ অঞ্চলের মধ্যে পুকুরটিতে মিষ্টি পানির অস্তিত্ব থাকায় মানুষ এর নাম দেন মিষ্টি পুকুর।
এরপর ১৯৮০ সালে তৎকালীন খুলনার বিভাগীয় কমিশনারের বরাদ্দে মিষ্টি পানির পুকুরটির সংরক্ষণে প্রাচীর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে খুলনার জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলাম পুকুরটির প্রাচীর অভ্যন্তরে চলাচলে চার পাশে রাস্তা নির্মাণ করেন এবং লোকজনের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, পাকা ঘাটসহ পাড়জুড়ে বিভিন্ন ফলদ ও ফুলের গাছ রোপণের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এরপর এর নাম হয় মধুমিতা পার্ক। মূলত ঐ সময় থেকে চিত্তবিনোদনের একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে মধুমিতা পার্ক। তবে কয়েক বছর এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে সেখানে সাধারণের পদচারণা কম থাকার সুযোগে ২০০৪ সালে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার দখলদাররা পার্কের যায়গা দখল শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় আওয়ামীলীগও সেখানে উপজেলা কার্যালয়ের জন্য একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে।দখল বন্ধে ঐ সময় ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করা হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় পাইকগাছা সহকারী জজ আদালতে অবৈধ বন্দোবস্ত ও দখলদারদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা করেন ও নিষেধাজ্ঞা পান। কাজ না হওয়ায় তৎকালীণ জাতীয় সংসদের স্পীকারের শরনাপন্ন হলে তার পরামর্শে এর সংরক্ষণ কমিটি ২০০৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। যার নং-৩৫৯০/০৫। হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি অন্তে বিগত ২০০৫ সালের ২৪ মে পার্ক অভ্যন্তরের অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে আদেশ দিলেও দখলদাররা ঐ আদেশ উপেক্ষা করে দখল কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।সর্বশেষ হাইকোর্ট বিভাগের রীট মামলা নং ৩৫৯০/২০০৫ ও কন্টেম পিটিশন নং ১০২/২২ মোতাবেক ৭ সেপ্টেম্বর’২৩ খুলনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমিনের নের্তৃত্বে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মাহমুদুর রহমান, ইউএনও মমতাজ বেগম, আশাশুনি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা আবুল কালাম মোড়লসহ থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানকার ৩০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি রয়ে যায় অক্ষত।স্থানীয় মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটির পাশাপাশি সচেতন মহল ভবনটি উচ্ছেদপূর্বক আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে পার্কের সম্পত্তির অবৈধ দখলমুক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এধরণের আদেশ বা নির্দেশনা থাকলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।