December 25, 2024, 4:17 pm
তামান্না আক্তার হাসি ঃ ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এছাড়া তিনি অস্ট্রিয়া প্রবাসী আলোচিত সেফুদার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের লেনদেন ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪ টায় রাজধানীর উওরা কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধবতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীর অস্ট্রিয়া প্রবাসী আলোচিত সেফুদাকে নাতি ডাকতেন। সেফুদার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং তার সঙ্গে লেনদেনও ছিল হেলেনা জাহাঙ্গীরের।
র্যাবের মূখপাএ খন্দকার আল মঈন বলেন, সেফুদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসীর নজর কাড়তে চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে গ্রেফতারকৃতের নিয়মিত যোগাযোগ ও লেনদেন রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া মাদক, বিদেশি মুদ্রা ও বন্যপ্রাণীর চামড়া জব্দের ঘটনায়ও আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করা হবে।
সংবাদ সম্মলনে র্যাব জানায়, হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া মাদক, বিদেশি মুদ্রা ও বন্যপ্রাণীর চামড়া জব্দের ঘটনায়ও আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করা হবে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে বিভিন্ন নামিদামি ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান নিয়ে তা নিজের বিলাসিতায় খরচ করতেন গ্রেফতার হেলেনা জাহাঙ্গীর। এছাড়া নানা অপকর্ম করতে তিনি নিজেই একটি চক্র গড়ে তোলেন।
এ চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করতেন।
জানা যায়, এর আগে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সোয়া ১২ টার দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র্যাব। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমান বিদেশি মদ, ক্যাসিনো সামগ্রী এবং অবৈধভাবে সংরক্ষণ করা হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। এছাড়া, তার বাসা থেকে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা, ওয়াকিটকি, ড্রোন ও বিপুল পরিমান ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব আরও জানান, হেলেনাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দিবাগত রাত ২ টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে তার মালিকানাধীন আইপি টিভি জয়যাত্রার কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে টেলিভিশন চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। অধিকতর তদন্তে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
র্যাবের গনমাধ্যম শাখার মুখপাত্র আরও বলেন, হেলেনা জাহাঙ্গীর অত্যন্ত বিলাসী নারী। তিনি বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতেন।
এছাড়া বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তাদের কাজ নিয়ে নিজ উদ্যোগে ফোন করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মিরপুরে তার জয়যাত্রা আইপি টিভি চ্যানেলের কার্যালয়ে পাওয়া স্যাটেলাইটসহ সব সরঞ্জামাদি অবৈধ ও অনুমোদনহীনভাবে পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যবস্থা নেবে।
সংবাদ সম্মলনে র্যাব জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার হেলেনা জাহাঙ্গীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন বলে জানিয়েছে
র্যাব বলছে- হেলেনা মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিব্রত করতেন তিনি।
জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হেলেনা গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য হয়েছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন তিনি।
সম্প্রতি ফেসবুকে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।