October 23, 2024, 10:30 am

সংবাদ শিরোনাম :
খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত খুলনা পাইকগাছায় বিগত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ আহত ৫৬  কয়রায় এক নারী বাসা বাড়ি কাজ করতে করতে বর্তমানে চা বিক্রি করেই স্বাবলম্বী কয়রা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময় সভা  আন্তরজাতকি এয়ারট্রাফকি কন্‌ট্রালারূক্স ডে উদযাপন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আতিকুল ইসলামকে গ্রেফতার ১৯তম জাতীয় ফার্নিচার মেলা শুরু রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় কেশবপুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ৮৯ টি মন্ডপে  দুর্গা পূজা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হলো  ঋণখেলাপি তারেক চৌধুরী অপকর্মের শেষ কোথায়।অবৈধ ক্ষমতার দাপটে গড়ে তুলেছেন ক্যাডার বাহিনি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় তিন গৃহকর্মী গ্রেফতার, ৩১ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার

বিশিষ্ট কিংবদন্তী লোকজ ও আঞ্চলিক গানের সুর সম্রাগী শেফালী ঘোষের ৩১ই ডিসেম্বর ২০০৬ মৃত্যু বার্ষিকী স্মরণে বর্ণাঢ্য সংক্ষিপ্ত জীবনী

মোহাম্মদ নুরুল আবছার (বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ও সাংস্কৃতিক)

তাহার জন্ম: ১৯৪৫ সালের ১১ই জানুয়ারী কানুনগো পাড়ায় বোয়ালখালী উপজেলায় চট্টগ্রামে সর্বজন জনপ্রিয় প্রখ্যাত গুণী শিল্পী শেফালী ঘোষের জন্ম হয়। তিনি ১৯৫৮ সনে গানের জগতে প্রদার্পন করেন। প্রথমে আধুনিক ও পল্লীগীতির মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয় এবং তিনি ১৯৬৩ হইতে পেশাভিত্তিক গানের জগতে যোগদেন।  তিনি মূলত চট্টগ্রাম এর আঞ্চলিক গান গেয়ে দেশ ও বিদেশে অসমান্য খ্যাতি অর্জন করেন এবং চট্টগ্রামের লোকজ সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ভাষাকে তার গানের মাধ্যমে এই উপমহাদেশে বিভিন্ন দেশে তুলে ধরে অন্যান্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ৩ হাজারের অধিক গান করে দেশ ও বিদেশে অসাধারণ সু-খ্যাতি অর্জন করেন। এবং দেশ ও জাতীর তথা বাংলা ভাষা সংস্কৃতির গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে সহ ১৪টি রাষ্ট্রে গান পরিবেশন করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কন্ঠ সৈনিক ছিলেন তার অসাধারণ গানে সেইদিন এদেশের দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা সত্যই অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ পেয়েছিলেন। সত্যই মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিধারা দিনগুলি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধোরা হানাদার বাহিনির বিরুদ্ধে লড়তে অসীম সাহস ও শক্তি যুগিয়েছিলেন।

তার গানের প্রথম ওস্তাদ  ছিলেন অমর্ত্য সেন। তিনি বাংলা ও উর্দু গানের তালিম তার কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন। তার মাতার নাম ছিল আশালতা ঘোষ ও তার স্বামী ননী গোপাল দত্ত। ওরা তাহাকে সংগীতে বিশেষ সাহায্য করিতেন। মূলত তাহার স্বামী ননী গোপাল দত্তের একান্ত সহযোগীতায় এই গুণি শিল্পী এতদূর জশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি শুধু চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান করেন নি। তিনি প্রথমে গাইতেন আধুনিক গান, নজরুল সংগীত, মাইজভান্ডারী গান, পল্লীগীতি, রবীন্দ্র সংগীত, ইসলামী গান ও গজল। যার কারণে এদেশের জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তিনি সকলের সুমধুর  কণ্ঠের  শিল্পী ছিলেন এবং তিনি এদেশেরই সর্বস্তরের জনগণের নিকট একজন গুণী প্রতিভাবান শিল্পী হিসাবে মাটি ও মানুষের হৃদয়ের মনি কোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই স্বনামধন্য গুণি শিল্পীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো সম্মান প্রদান করা হয় নাই। কিন্তু বিগত তথ্যবধায়ক সরকার কর্তৃক ১৮/০২/২০০৮ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়েছিল। অথচ তাহার চাইতে অযোগ্য দুর্বল অখ্যাতি শিল্পীকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হইয়াছে। মূলত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় গান করার কারণে চট্টগ্রামের প্রতি বিমতাসূলভ আচরণের দরুণ তার জীবদশায় তাহার নায্য পাওনা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতী দেয় নাই। তার জন্য আমরা জাতি হিসাবে লজ্জিত ও অকৃতজ্ঞ। কেননা তিনি ছিলেন সমগ্র বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী এই গুণি শিল্পীকে শেষ পর্যন্ত সুচিকিৎসা থেকে আর্থিক অভাবের কারণে বঞ্চিত হয়ে বিনা চিকিৎসায় অবহেলায় ভারতের এপোলো হাসপাতালের চিকিৎসা ও পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবশেষে ৩১শে ডিসেম্বর ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে না ফেরার দেশে চলে যান। উল্লেখ্য যে, তার সু-চিকিৎসার জন্য সংগ্রামী জননেতা মরহুম মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী শুধুমাত্র ৪০ হাজার টাকা দান করেছিলেন। তার অন্যতম গানের জুটি ছিলেন শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চ। তার জীবদশায় ৫ হাজার এর অধিক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে জাতি সত্যিই একজন গুণি শিল্পকে হারালো তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তার মৃত্যুতে এদেশের লোকজ ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গানের সাংস্কৃতির অজনের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়। বর্তমানের তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাকে নিয়ে গবেষণা হওয়া একান্ত প্রয়োজন। তার ২০০ গানের অধিক ক্যাসেট ও সিডিগুলি সরকারি ও বেসরকারি প্রচার মাধ্যম গুলোতে ব্যাপক প্রচার প্রসার একান্তই প্রয়োজন।

উল্লেখ্য যে, তিনি ১৯৭১ সালের বিটিভির উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে “ওরে সাম্পান ওয়ালা তুই আমারে করলি দেওয়ানা” গানটি পরিবেশন করে সেই দিন বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে অনেক সম্মান ও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, তিনি এদেশের চলচ্চিত্রের কণ্ঠ দিয়ে অসমান্য অবদান রাখেন। তার উল্লেখযোগ্য ছায়াছবি গুলো হচ্ছে। ১। মালকাবানু ২। সাম্পান ওয়ালা ৩। মাটির ঘর ৪। আসামী

৫। মধুমিতা ৬। বর্গী এলো দেশে ৭। মনের মানুষ ৮। স্বামী ইত্যাদি।

উল্লেখ্য যে, তার কণ্ঠে নির্মিত ছায়াছবি বসুন্ধরা চলচ্চিত্রটি জাতীয় পুরস্কার পান। তার জীবনের শ্রেষ্ট গান হচ্ছে “তুমি যে আমার জীবনের উপহার কি করে তোমায় আমি ভুলব” এই শিল্পী অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়ে এদেশের আপম জনগণের কাছে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। সেই জন্য আমরা তাকে তার মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। তার উল্লেখ যোগ্য অসংখ্য গানের মধ্যে শ্রেষ্ট গানগুলো হচ্ছে: ১। ও শ্যাম রেঙ্গুইন ন যাইওরে। ২। সূর্য ওঠে রে অবায় লাল মারি। ৩। যদি সুন্দর এক্কান মুখ পাইতাম মহেশখালীর পানর কিলি তারে হাবাইতাম। ৪। ঢোল বাজার মাইক বাজার আর পরাণে কেন গরের। সর্বশেষে আধার ঘরের রাইত হাডাইয়ম হারে লই বন্ধু গেলগই এই গানটি গেয়ে গেয়ে বিগত ৩১ই ডিসেম্বর ২০০৬ সালে তিনি পরোলোক গমন করেন। আমি এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুতে খুবই মর্মাহত।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন