October 25, 2024, 10:26 pm

সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু প্রতিরোধে দক্ষিণ খান বিএনপি’র ভিন্ন রকম ক্যাম্পেন  শেখ হাসিনাকে ৫৭ বার ফাঁসি দিলেও ক্ষতি পূরণ হবে না: সেলিম উদ্দিন। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় আ’লীগ নেতাসহ ৯ জনের সদস্যপদ বাতিল পাইকগাছায় ঘুর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে অসহায় দিনমজুর সহিলের মাথা গোজার ঠাইটুকু হারিয়ে ফেলেছে খুলনা জেলা কারাগারে হাজতি ও কয়েদির সাথে মারামারি ৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান বিগত ১ বছরে দুবার ঝড়ে কপাল পোড়েছে কয়রা বাসির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিনকে গাজীপুরে পদায়ন সাবেক কমিশনার হারুনের দাপটে বসত ভিটে ছড়া এক দম্পতি   খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত

পাঠাও চালককে বাসা থেকে ডেকে গুম করার উদ্দেশ্যে তুরাগ নদীতে ডুবিয়ে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী এবং নৌকার মাঝিসহ ০২ জনকে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১

তামান্না আক্তারঃ র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতার এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়াও র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যা ঘটনার দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করে র‌্যাব সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

গত ০৬ জুন ২০২৩ তারিখ বিকাল আনুমানিক ১৭০০ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন রোদ্রপুর এলাকায় তুরাগ নদীতে একটি লাশ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ভিকটিমের পিতা মোঃ ফারুক উক্ত লাশটির মুখ মন্ডল ও পরিধেয় বস্ত্র দেখে ভিকটিম মোঃ শরীফ হোসেন রিফাত (২০) এর লাশ সনাক্ত করে। সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে জিএমপি, গাছা থানায় একটি মামলা রুজু করেন, যার মামলা নং-১২ তারিখ ০৭/০৬/২০২৩, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। উক্ত নৃশংস হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। তাছাড়া উক্ত হত্যাকন্ডের আসামী গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবী করে গত ০৭/০৬/২৩ তারিখ টঙ্গী এরশাদ নগর এলাকায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করে। এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনা রহস্য উম্মোচনের জন্য র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আসামী গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুন ২০২৩ তারিখ রাত আনুমানিক ২০০০ ঘটিকায় র‌্যাব-১, গাজীপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামী *তাইজুল ইসলাম@কাজল(৩২), পিতা-মোঃ আব্দুর রশিদ, থানা-টঙ্গী পূর্ব, জিএমপি গাজীপুর’কে* গ্রেফতার করে এবং তার দখল হতে ০১ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। ধৃত আসামী তাইজুল ইসলামের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী উক্ত মামলার ঘটনায় জড়িত অপর আসামী নৌকার *মাঝি এমারত হোসেন (৩৮), পিতা-মোঃ মাইনুদ্দিন, থানা-গাছা, জিএমপি, গাজীপুর‘কে* গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন পলাশোনা খেয়াঘাট এলাকা হতে একই তারিখ আনুমানিক ২১০০ ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামীদ্বয় তাইজুল ইসলাম@কাজল ও এমারত হোসেন ভিকটিম রিফাতকে হত্যার কথা স্বীকার করে এবং এই চাঞ্চল্যকর হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয়।

ধৃত আসামী তাইজুল ইসলাম@কাজল’কে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম রিফাত তার পূর্ব পরিচিত এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্যপূর্ণ সর্ম্পক ছিল। আনুমানিক একমাস পূর্ব হতে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক দেনা পাওনা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং আসামীর ভাষ্যমতে ভিকটিম রিফাত আসামীর পাওনা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে আসামী কাজলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ভিকটিম রিফাত’কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ০৫/০৬/২০২৩ তারিখ আনুমানিক ১৭০০ ঘটিকায় আসামী কাজল তার অপর সহযোগী সোহাগ এর সহায়তায় ভিকটিম রিফাতকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে তার বাসা হতে ডেকে এনে তুরাগ নদী পার হয়ে তারা সাতাশকান্দি চরে যায় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্ধ্যা অবধি অপেক্ষা করে। পরবর্তীতে আনুমানিক রাত ২০৩০ ঘটিকার সময় তারা নদীর অপর পাশ থেকে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। পূর্বের লেন দেনের বিষয় নিয়ে পুনরায় তাদের মধ্যে তর্ক বিতর্কের একপর্যায়ে আসামী কাজল ও সোহাগ দুই জনেই ভিকটিমকে কিল-ঘুষি মেরে নদীর পাড়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং আসামী কাজল জালের রশি দিয়ে ভিকটিমের হাত বেঁধে ফেলে। তখন ভিকটিম আঘাতের ফলে গোঙ্গরাতে থাকে। খেয়া ঘাটের অপর পাড়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়োজিত মাঝি এমারত হোসেন’কে ডাক দিয়ে এপারে নিয়ে আসে। আসামী কাজল ও সোহাগ ভিকটিম রিফাতকে টেনে হেঁছড়ে ধরাধরি করে নৌকায় উঠায়। নৌকায় মাঝ নদীতে আসলে আসামী কাজল ও সোহাগ ভিকটিম রিফাত এর গায়ের টি-শার্ট ও স্যান্ডু গেঞ্জি খুলে ভিকটিমের হাঁত-পা বেঁধে ফেলে এবং গুম করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় মাঝ নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিম পানিতে ডুবে মারা গেলে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে তারা সেখান থেকে দ্রুত ঘাটে চলে আসে। স্থানীয় পুলিশ ও আইন শৃ্খংলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ভয়ে ভিকটিমের রেখে যাওয়া মোটর সাইকেল রেখে পাঁয়ে হেটে কিছুদুর এসে ইজি বাইকে করে আসামীদ্বয় যার যার বাড়ীতে চলে যায়। ভিকটিমের পরিবারের লোকজন ভিকটিমকে খোঁজা খুঁজি করলে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের কানাঘুষা শুনে তারা বাড়ী থেকে আত্মগোপনে চলে যায়। উল্লেখ্য যে, ধৃত আসামী কাজলের বিরুদ্ধে গাজীপুর কোর্টে ও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন ও তদন্তাধীন আছে মর্মে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন