December 27, 2024, 5:49 am
বিশেষ প্রতিনিধি:মোঃগোলাম রব্বানীঃ আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনি জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গাড়িতে আগুন দিয়ে সরকার ফেলা যায় না। বিএনপির আন্দোলনে প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়?“অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয় আর কতগুলো লোক নিয়ে এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে এটা তাদের মনে রাখা উচিত।
“তারা মনে করেছে দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ না। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না।”
প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা সাধারণত সিলেট থেকেই প্রচার শুরু করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সাড়ে ১১টায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি। ছোট বোন শেখ রেহানাও এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন।
বিমানবন্দর থেকে দুই বোন প্রথমে যান হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজারে। পরে তারা যান হযরত শাহপরাণ (র.) এর মাজারে।
সেখান থেকে বের হয়ে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো দল চাইলে নির্বাচনে না আসতে পারে; কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষ মারার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।”
সেখান থেকে সার্কিট হাউজে গিয়ে দুপুরের খাবার খান শেখ হাসিনা। বিকাল ৩টায় তিনি যোগ দেন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায়।
সকাল থেকেই এই মাঠে জড়ো হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাতে লাল-সবুজ পতাকার সঙ্গে রঙিন পোশাক উৎসবের আমেজ তৈরি করে গোটা এলাকায়।
সভা মঞ্চে এসে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। এরপর আঞ্চলিক ভাষায় গান গেয়ে তাদেরকে স্বাগত জানায় সিলেট বেতারের দুটি দল।
এই জনসভায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ১৯টি সংসদীয় আসন থেকেই আসেন নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী সবগুলো আসনে দলের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
বিশাল এই জনসভায় নেতাকর্মীরা আসেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক ‘নৌকা’র প্রতিকৃতি নিয়ে। পুরো জমায়েতে ক্ষণে ক্ষণে ‘নৌকা, নৌকা’ স্লোগানে মাতিয়ে রাখেন তারা।
নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “এই নৌকা নুহ নবীর নৌকা, এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, আবার এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।
“আওয়ামী লীগ সরকারে আছে জনগণের উন্নতি হচ্ছে। আজকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।”
২০০১ সালে যে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে, সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া; ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেই কারণে বাহবা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসাল। রেজাল্ট কী? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন।
“আমি বলেছিলোম খালেদা জিয়া গ্যাস দিতে পারবে না, গ্যাস পাবেই না। আসলে পায়নি, দিতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা। যে কূপ খনন করে খালেদা জিয়ার আমলে গ্যাস পায়নি, সেই কূপ খনন করে আওয়ামী লীগের আমলে আমরা শুধু গ্যাস না, তেলও পেয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয়, জন বুঝেই ধন দেয়। আল্লাহ জানে ওদের কাছে দিলে সব নয়ছয় করবে। আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে।”
এরপর জনতার উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন, “বলেন, আমি ঠিক বলছি?”সবাই তখন সমস্বরে চিৎকার করে সমর্থন জানান।
সিলেটে মেট্রোরেলের সমীক্ষা
******************
জনসভায় আওয়ামী লীগ আমলে গত ১৫ বছরে সিলেটে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে ভবিষ্যতের চিন্তাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “সিলেটে ক্বিন ব্রিজের পাশে নতুন ব্রিজ করা হবে, নগরকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে, ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো হবে। সিলেট বিমানবন্দর থেকে চৌকিদিঘি এলাকার সড়ক চার লেইন করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং গ্রামকে শহরে পরিণত করা হবে।”
সিলেটে মেট্রোরেল চালু করা যায় কি না সেটা তা সমীক্ষা করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া উন্নতমানের হউজিং এস্টেট করা, লাক্কাতুরায় আধুনিক উচ্চ বিদ্যালয়, মদনমোহন কলেজকে সরকারিকরণ, এমসি কলেজে ৫ তলা একাডেমিক কাম পরীক্ষ ভবন, ১০ তলা একাডেমিক ভবন, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ১০০ শয্যার আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৩৪১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ও সিলেটে একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “নগরীর বন্দরবাজারে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য ২৫ তলা আধুনিক কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক উপজেলায় আমরা কারিগরি স্কুল করে দিচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের কাজেই জনগণের সেবা করা। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে করব কথা দিয়েছিলাম; বাস্তবায়ন করেছি, করে দিয়েছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’’
স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন; মেধাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, মেধা দক্ষতা ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি, উন্নত, উদার, অগ্রসমান সমাজ।
“আমরা অসম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ে তুলব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
‘‘স্মার্ট সরকার, স্মার্ট জনগণ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি; সেটা করেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলব”, বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
অগ্নি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে’ বিএনপির আন্দোলনেরও কঠোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, “আজকে সমস্ত জায়গায় বোম