December 25, 2024, 7:49 pm
মনির হোসেন জীবন- রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা ও জাল টাকা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ।
র্যাব জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে, একটি প্রতারক চক্র দীর্ঘ দিন যাবত জাল নোট তৈরি করে রাজধানী ঢাকার কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে আসছিল। এছাড়া এই চক্রটি জাল নোটের ব্যবসা করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ পর্যন্ত আটককৃত জিসান বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২ কোটি মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে স্বীকার করেছে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১১ টার দিকে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় একটি সাড়াশি অভিযান চালিয়ে জাল টাকাসহ তাকে আটক করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম মোঃ জিসান হোসেন রিফাত (১৯)। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার কুতুবখালী গ্রামের মোঃ দিদারুল আলমের পুত্র।
এ সময় তার নিকট থেকে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার নয়শত টাকার মূল্যমানের জাল নোট (যার মধ্যে ১০০০, ৫০০, ১০০, ৫০, ২০ ও ১০ টাকা সমমানের জাল নোট), ১টি মনিটর, ১টি সিপিইউ, ১টি কালার প্রিন্টার, ৪টি হার্ডডিক্স, ১টি মাউজ, ১টি কী-বোর্ড, ৪টি ক্যাবল, ২টি স্কিন প্রিন্টিং ফ্রেম, ১টি জাল টাকা কাটার কাঠের বোর্ড, ৮টি এন্টি কার্টার ব্লেড, ১টি কাচি, ২টি ফেবিকল আঠা ও জাল টাকা তৈরীর কাজে ব্যাবহৃত ২৬৪ পিস সাদা কাগজ সহ জালনোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্বারমূলে জব্দ করা হয়।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীস্হ র্যাব-১০ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর কোম্পানী কমান্ডার- সিপিসি-১, পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর সহকারী পুলিশ সুপার এবং সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এম. জে. সোহেলসহ র্যাবের অন্যান্য উধর্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্হিত ছিলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত জিসান সংঘবদ্ধ জাল টাকা প্রস্ততকারি চক্র কর্তৃক ব্যবহৃত টেলিগ্রাম এ্যাপস, ইউটিউব ও গুগলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের সাহায্যে জাল টাকা তৈরির সার্বিক দক্ষতা অর্জন করে। অতঃপর জিসান উচ্চভিলাষী অভিপ্রায় ও কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে জাল টাকা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে সে জাল টাকা তৈরির প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয় করে এবং জাল টাকা সরবরাহের জন্য জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহকারী বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেইজ ও গ্রুপে সংযুক্ত হয়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র টেলিগ্রাম এ্যাপস ব্যবহার করে জাল টাকা তৈরীর প্রযুক্তি আদান প্রদান করে এবং জাল টাকা বিক্রির জন্য নেটওয়ার্ক হিসেবে ব্যবহার করে। জিসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে এবং সেখানে সে জাল নোট তৈরি/সরবরাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করে অভিনব কায়দায় জাল নোটগুলো বিক্রয় করত। সে তার ফেইসবুক গ্রুপ থেকে কমেন্ট দেখে তাদের সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাটিং এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে অগ্রীম টাকা নিয়ে নিত এবং পরবর্তীতে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করতো।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, এ চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, ডেমরা এবং নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরিকৃত জাল নোট সরবরাহ করত। সে প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যের জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। জাল টাকা সরবরাহকারী চক্রটি মাছ বাজার, লঞ্চ ঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানান কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করে আসছিল। এছাড়াও জিসান অধিক জন-সমাগম অনুষ্ঠান বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানীর পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমান জাল নোট ছাপিয়ে ছিল বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জালনোট প্রিন্টিং এর সময় কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়িয় ফেলত। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।