December 22, 2024, 10:47 pm
লেখক : ফাত্তাহ তানভীর রানা
শহীদুল ইসলাম খোকন একজন সিনেমা পরিচালক। যিনি বাংলাদেশী কোনো এক বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের পোস্টারে কোনো অভিনেতা অথবা নায়ক-নায়িকার ছবি রাখেননি। শুধু রেখেছেন পরিচালকের নাম; মুভিটি সেই সময় ব্যবসায়িক সফলতা লাভ করে। মুভিটার নাম যোদ্ধা, পরিচালনা করেন প্রয়াত শহীদুল ইসলাম খোকন
২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যোদ্ধা মুভিতে অভিনয় করেন রুবেল, পূর্ণিমা, রাজীব, হুমায়ন ফরীদি, মিজু আহমেদ, খলিল, আনিসসহ আরো অনেকে। পরিচালক সিনেমায় অশ্লীলতার বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিবাদ করেছিলেন। শহীদুল ইসলাম খোকন প্রায় চল্লিশটি বাণিজ্যিক মুভি নির্মান করেন। তাঁর ছবি মানেই দর্শকদের কাছে একটা নতুন কিছু, একটা ভিন্ন কিছু।
তিনি বাণিজ্যিক ছবিতে মৌলিক গল্প, দুর্দান্ত মার্শাল আর্ট আর জনপ্রিয় গানের সন্নিবেশন ঘটিয়েছেন। রুবেল, হুমায়ন ফরীদি, আলেকজান্ডার বো, শিমলা, তামান্না, ড্যানি সিডাক, ইলিয়াচ কোবরা, কবির খাঁ মূলত তাঁর মুভিতে অভিনয় করেই দর্শকনন্দিত হয়েছেন। তিনি এই ইন্ড্রাস্ট্রিতে পরিচালক হিসেবে সব্বোর্চ টাকা পারিশ্রমিক হাঁকিয়েছে আবার পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন দাপটে। নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশের প্রথম সিক্যুয়েল মুভি চেহারা, দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ডান্সিং কুংফু, ফুটবল কুংফু, আর্থ কুংফুসহ নিত্য-নতুন সব মার্শাল আর্ট। যা বাংলাদেশের দর্শকরা আগে পরে কখনো দেখেনি। দেশী চলচ্চিত্রের গল্পের একঘেঁয়ে ভাব দূর করা এবং গল্পের ভিন্নতা আনতে শহীদুল ইসলাম খোকনই প্রথম মৌলিক গল্প নিয়ে বিনোদন মুভি নির্মান করেন। ভণ্ড, অপহরণ, পাগলা ঘন্টা, পালাবি কোথায়, ভেজা বেড়াল, ম্যাডাম ফুলি এই সিনেমাগুলো দেখলেই বুঝবেন! তিনি শুধু বিনোদন-বাণিজ্যিক সিনেমাই নির্মান করেছেন কী? মুক্তিযুদ্ধের গল্পকে আশ্রয় করে নির্মান করেন কমান্ডার, ঘাতক, বিপ্লব। এছাড়া আহমেদ ছফার ওঙ্কার উপন্যাসকে বাংলা চলচ্চিত্রে রূপ দেন। আবার, দেশপ্রেমের গল্প নিয়ে তৈরী করেন লাল সবুজ।
শহীদুল ইসলাম খোকন মানবাধিকার বিষয় নিয়ে বাস্তব ভিত্তিক সিরিয়াস গল্প নিয়ে নির্মান করেন মুভি স্বপ্নপূরণ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী নায়ক-পরিচালক-প্রযোজক মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেলরানা’র হাত ধরে আসা এই গুণী পরিচালক তাঁর লড়াকু মুভিতে এদেশের দর্শকদের চিনিয়েছেন রুবেল এবং মার্শাট আর্টকে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কারপ্রাপ্ত এই তারকা পরিচালক নায়ক-পরিচালক-ভিলেনকে (রুবেল-শহীদুল ইসলাম খোকন-হুমায়ুন ফরীদি) এক সাথে জুটি বেঁধে মুভি নির্মান করতেন এবং ছবি হিট করত। বরিশালে জন্ম নেয়া এই ক্ষণজন্মা সিনেমা পরিচালক চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতিও ছিলেন।
তিনি ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পরোলোকগমন করেন। আজ তাঁর চলে যাবার চার বছর। আমরা হারিয়েছি একজন দেশপ্রেমিক মুভিমেকারকে। আজ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের দুরবস্থায় তাঁর মত একজন মেধাবী এবং সাহসী সিনেমা পরিচালকের বড় প্রয়োজন ছিল।